Monday, January 30, 2017

কবিতাগুচ্ছ

ট্রামে

কলেজে দেখি, 'ফিগার অফ মেরিট', বাইরে ফিগার
রূপ  রঙ  অথবা   রঙচটা   সৌন্দর্যের  বাড়াবাড়ি
কলেজের   বইখাতাগুলো     অবজ্ঞায় হাতে ধরে রাখা
হাতে চুড়ি,   সোনার দুগাছি বালা   অথবা  ঘড়ি
মুখের   ব্রণ-মেছেতায়    প্রসাধনের   প্রচ্ছন্ন  প্রলেপ !

দেহেতে    ব্লাউজ আছে,   হাতা  তার,    বগলেতে  শেষ
সপ্তাহে  বাড়িতে  খোঁজে,   কোনখানে  একটু  নিরালা
অন্তর্বাসও   বুঝি  আর       অন্তরের নয়
বুক ফুটে   বের হয়,     বুকের সুরভি !

নাম তার বুঝি বা সুরভি,  অথবা অর্চনাও হতে পারে
চেয়ে  দেখে,     চেয়ে  চেয়ে  দেখে
আমার  চশমাপরা  মুখখানি,  নর্দমাপ্যান্ট,  ছুঁচলো বুট
এবং   তদুপরি   আমাকেও !

বড় ভালো লাগে,  ভালোলাগা  ভালোবাসা  জাগে বুঝি ধীরে
ভালো  লাগে  ট্রামে  যেতে ,  মেয়েদের  ভিড়ে !



 একটি মেয়ে

বিস্মিত দৃষ্টি মেলে চেয়ে আছে একটি মেয়ে
পরনে রঙিন চেলি, লতাপাতা আঁকা পাড়;
গহন চুলেতে তার মুখটি রয়েছে ছেয়ে--
গলায় সব্‌জে সুতোয় ঝিনুকের সাদা ধবধবে হার !

বন্ধ ওষ্ঠ পরে, রেখেছে তর্জনী
মাথায় গোঁজা কটা বনের ফুল;
কণ্ঠে ওঠে থেকে থেকে মৃদু মিঠে ধ্বনি--
বক্ষ তার স্তন লাভে হয়েছে ব্যাকুল !

আজকের কিশোরী এ, একদিনের বালিকা
আগামী দিনের মাতৃ-মূর্তি এরই অন্তরে;
ফলাবে ফসল! বিস্ময়ে চেয়ে থাকা এই নাবালিকা--
বিধাতার এক ছোট্ট, গোপন, মন্তরে ! 



অতিপত্তি দিয়ে প্রতিপত্তি


অতিপত্তি
তামাদি।
বাতিল।
যেমন
পুরনো
পাঁচশো টাকার
আর হাজার টাকার
নোট !
সাধারণ অসাধারণ
সব লোকে পেল
কিছু-না-কিছু
চোট !

সরকার দেখালো
তার প্রতিপত্তি !





অতিপ্রাকৃতবাদ
অতিপ্রাকৃতবাদ
অতিপ্রাকৃত বিষয়ে বিশ্বাস।
অতিপ্রাকৃত শক্তি
মেনে নেওয়া।
ভূত প্রেত পিশাচ দেবযোনি ঈশ্বর
এসবে
অতিপ্রাকৃত সৃষ্টিতত্ত্বের
উত্থান।
অতিপ্রাকৃত সৃষ্টিতত্ত্বের পেছনে
অতিপ্রাকৃত শক্তিতত্ত্বের
উদ্ভাবন রয়েছে।
অপৌরুষের শাস্ত্রের
নিয়তির
এই তো বিধান !
অতিপ্রাকৃতবাদ  মতবাদ   
মেনে নেওয়াতেই
শাস্ত্রের উদ্ভব !
এই  মেনে নেওয়াকেই
বলা হয়
বিশ্বাস।
হয়তো অন্ধ বিশ্বাস !
বলা হয়
মেনে নেওয়াই বিশ্বাস
এবং
বিশ্বাসই মেনে নেওয়া।
স্বামী-স্ত্রীর
সুসম্পর্কের মত
মধুময় কার্যকারী পবিত্র।
অতিপ্রাকৃতবাদ আসলে
স্বাভাবিকতার বহির্ভূত
অন্য এক
অস্বাভাবিক মতবাদ ! 



অধিকারী

প্রকৃত অধিকারিই
ফলে সিদ্ধিলাভ করে।

যদিও
দেশকাল
তৈলমর্দন
এবং ঘুষবন্ধন
তাতে সহায়ক হয়।




অতিরঞ্জিত


অতি রঞ্জিত
ওটা কখনো
হয় না !

ভালো রঙ হলে
এক পোঁচের পরে
আর এক পোঁচ
রঙ দিলেও
বাড়ে না
রঙ-এর
ঘনত্ব !

ওটাই
ভালো রঙ-এর
বিশেষত্ব
এবং
প্রাথমিক সত্ত্ব !




গীতায় ভগবান শ্র্রীকৃষ্ণ


সাত্ত্বিক ব্যক্তিরা
ঈশ্বরের এত সন্নিকটে
অবস্থান  করেন
যে

তাঁদের পক্ষে
সংগ্রামমুখর
রাজসিক কর্ম করে
পরের উপকার

বা  ধর্মপ্রচার

কোনটাই করা
সম্ভবপর নয় !

সর্বশ্রেষ্ঠ সাত্ত্বিক
মহামানবেরা

' কর্ম '-করতে
পারেন না !

তাঁদের মনে
কোন আসক্তিই নেই।

তাঁরা
রজোগুণহীন।

গীতায়
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ  বলেছেন

যিনি
আত্মাতেই
আনন্দ অনুভব করেন
আত্মাতেই তৃপ্ত
আত্মাতেই সন্টুষ্ট

তাঁর
কোন কাজই নেই!



সূত্র ও সংযোজনা          ' প্রবন্ধ বিচিত্রা ',------ তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ।   

No comments:

Post a Comment